বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ প্রকাশিত হয়েছে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব অফিসিয়াল ওয়েবসাইট joinbangladesharmy.army.mil.bd এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। এই নিয়োগে অসংখ্য শূন্য পদে নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের জন্য আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
আপনি কি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি পেতে আগ্রহী? যদি হ্যাঁ, তাহলে আপনার জন্য সুখবর!এই পোস্টে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সৈনিক পদে নিয়োগ ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব, যাতে আপনি সহজেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। চলুন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সৈনিক পদে নিয়োগ ২০২৫: এক নজরে
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
প্রতিষ্ঠানের নাম | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
নিয়োগ প্রকাশের তারিখ | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ |
পদ সংখ্যা | অসংখ্য |
বয়সসীমা | ১৮-৩০ বছর |
শিক্ষাগত যোগ্যতা | এসএসসি পাশ |
আবেদনের শুরু তারিখ | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ |
আবেদনের শেষ তারিখ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ |
আবেদনের মাধ্যম | অনলাইন/এসএমএস |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | www.joinbangladesharmy.army.mil.bd |
আবেদনের লিংক | http://sainik.teletalk.com.bd |
আবেদনের যোগ্যতা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হবে:
১. সাধারণ ট্রেড (GD) – পুরুষ ও মহিলা
- বয়সসীমা: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে ১৭-২০ বছর (এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৩.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ।
২. টেকনিক্যাল ট্রেড (TT) – পুরুষ ও মহিলা
- বয়সসীমা: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে ১৭-২১ বছর (ড্রাইভিং পেশায় অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা ১৭-২২ বছর)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট ট্রেডে কোর্স সম্পন্ন।
শারীরিক যোগ্যতা
শারীরিক যোগ্যতা | পুরুষ প্রার্থী | মহিলা প্রার্থী |
---|---|---|
উচ্চতা | ১.৬৫ মিটার (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি) | ১.৫৫ মিটার (৫ ফুট ১ ইঞ্চি) |
ওজন | ৪৯.৯০ কেজি (১১০ পাউন্ড) | ৪৭ কেজি (১০৪ পাউন্ড) |
বুক | স্বাভাবিক ০.৭৬ মিটার, স্ফীত ০.৮১ মিটার | স্বাভাবিক ০.৭১ মিটার, স্ফীত ০.৭৬ মিটার |
আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
১. এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদন
- প্রথম এসএমএস:
SAINIK<space>BOARD<space>ROLL<space>PASSING YEAR<space>DISTRICT CODE
লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠান।
উদাহরণ:SAINIK DHA 123456 2020 34
- দ্বিতীয় এসএমএস: প্রাপ্ত পিন নম্বর দিয়ে
SAINIK<space>YES<space>PIN<space>MOBILE NUMBER
লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠান।
২. অনলাইনে আবেদন
- http://sainik.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট করুন।
নিয়োগ পরীক্ষার ধাপ
১. লিখিত পরীক্ষা: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা।
২. শারীরিক পরীক্ষা: উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ ইত্যাদি।
৩. সাক্ষাৎকার: চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- এসএসসি মার্কশীট ও সনদের মূল কপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি (০৬ কপি)।
গুরুত্বপূর্ণ লিংক
আবেদন করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন:
আবেদন করুন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: দেশপ্রেম, শক্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু একটি সামরিক বাহিনীই নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত এই বাহিনী প্রতিনিয়ত দেশের সুরক্ষা, মানবিক সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই লেখায় আমরা জানবো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস, গঠন, কার্যক্রম এবং জাতীয় জীবনে এর অবদান সম্পর্কে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস: মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যাত্রা শুরু। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈন্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” নামে এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে মাত্র কয়েকটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে যাত্রা করলেও বর্তমানে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ও আধুনিক সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
মাইলফলক ঘটনাবলি
- ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও স্বাধীনতা অর্জন।
- ১৯৯১: প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ (নামিবিয়া)।
- ২০০৭: সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা।
- ২০১৩: রানা প্লাজা ধসে উদ্ধার অভিযানে মুখ্য ভূমিকা।
সেনাবাহিনীর গঠন ও সংগঠন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গঠন অত্যন্ত পরিকল্পিত ও স্তরবিন্যাসযুক্ত। এর মূল কাঠামো নিম্নরূপ:
প্রধান শাখাসমূহ
- পদাতিক বাহিনী (ইনফ্যান্ট্রি): যুদ্ধের মাঠে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মূল শক্তি।
- সাঁজোয়া বাহিনী (আর্মার্ড কর্পস): ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানের মাধ্যমে দ্রুত আক্রমণ।
- তোপখানা (আর্টিলারি): দূরপাল্লার আর্টিলারি সাপোর্ট।
- ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পস: সেতু, রাস্তা ও প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ।
- সিগন্যাল কর্পস: যোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা।
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
- বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ), ভাটিয়ারী: অফিসারদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ।
- সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা: সামরিক চিকিৎসক প্রস্তুতকরণ।
- ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ: উচ্চতর রণকৌশল প্রশিক্ষণ।
সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ও কার্যক্রম
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এর বাইরেও রয়েছে বহুমুখী কর্মকাণ্ড:
জাতীয় নিরাপত্তা
- সীমান্ত পাহারা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
- সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ বিতরণ (যেমন: বন্যা, সাইক্লোন)।
মানবিক ও উন্নয়নমূলক কাজ
- অবকাঠামো নির্মাণ: সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পস দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সেতু ও হাসপাতাল নির্মাণ করে। উদাহরণ: পদ্মা সেতু প্রকল্পে সহায়তা।
- চিকিৎসা সেবা: সেনা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা প্রদান।
- কৃষি উন্নয়ন: “আর্মি ডেয়ারি ফার্ম” ও “আর্মি টি এস্টেট”-এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি দেশে ১,৮০,০০০+ সৈন্য অংশ নিয়েছে।
- উল্লেখযোগ্য মিশন: কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, লেবানন।
- স্বীকৃতি: জাতিসংঘ থেকে ১৫০+ মেডেল প্রাপ্তি।
জাতীয় উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
সেনাবাহিনী শুধু যুদ্ধের মাঠেই নয়, দেশ গঠনের নানামুখী প্রকল্পেও সক্রিয়:
মেগা প্রকল্পে অংশগ্রহণ
- মেট্রোরেল প্রকল্প: ঢাকা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও নির্মাণ তত্ত্বাবধান।
- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: উৎক্ষেপণ ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট।
- কোভিড-১৯ মোকাবিলা: হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও ভ্যাকসিন বিতরণে সাহায্য।
শিক্ষা ও সমাজসেবা
- আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এআইবিএ): বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা।
- সেনা কল্যাণ সংস্থা: সৈন্যদের পরিবার ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য সুযোগ-সুবিধা।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
বর্তমান চ্যালেঞ্জ
- আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তি (সাইবার যুদ্ধ, ড্রোন) রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা।
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।
- রোহিঙ্গা সংকটে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- ফোর্স গোল ২০৩০: ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিতকরণ।
- নৌ ও বিমান বাহিনীর সাথে সমন্বয়: যৌথ সামরিক মহড়া (যেমন: “বাংলাদেশ ট্রায়াফল্ট”)।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী নয়, এটি দেশের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার সোপান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম এই বাহিনীকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এই বাহিনী দেশের সুরক্ষা ও উন্নয়নে নিবেদিত থাকবে—এটাই সকল দেশবাসীর প্রত্যাশা।
শেষ কথা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগ ২০২৫ আপনার জন্য হতে পারে একটি সুবর্ণ সুযোগ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সকল শর্তাবলী খুব ভালোভাবে পড়ুন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার আবেদন সম্পন্ন করুন। নিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
এই পোস্টটি আপনার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন, যাতে তারাও এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। ধন্যবাদ!
Md Ronju khan